গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও নিরেপেক্ষ মিডিয়ার একান্ত প্রয়োজন।
বিগত সরকারের নিয়ন্ত্রে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কে দলীয় সাংবাদিকতায় পরিনত করায় প্রায় ১৫ বছর যাবত গণতন্ত্র কোমায় ছিলো। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরলে কোন ক্রমেই দেশে দূরর্নীতি করা সম্ভাব না। তাই আমি বলবো সাংবাদিকতার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই সকল সাংবাদিককে বস্ত নিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে এ পেশার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য তিন ধরনের নিরাপত্তা দরকার- আইনি, অর্থনৈতিক ও দৈহিক সুরক্ষা। আজকাল কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিকরা কোনোভবেই নিরাপদ নয়। মুক্ত সাংবাদিকতা ও টেকসই উন্নয়ন একে-অপরের পরিপূরক। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের যে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তা সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীরা দেশের স্বার্থে তুলে ধরা মানে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা নয় বরং সরকার কে সহায়তাই করছেন। গুজব, মিথ্যা অপ্রচার ইত্যাদির বিরুদ্ধে কার্যকর বস্তুই হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে গণতন্ত্রকে। বর্তমানে তথ্য সন্ত্রাস ও হলুদ সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে ম্লান করে দিচ্ছে। যেটি বিগত দেড় দশক ধরে দেশে বিরাজমান ছিল। মুক্ত গণমাধ্যম ফিরে আনতে হলে প্রকৃত সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। এছাড়া দেশে হলুদ সাংবাদিক বহুগুন বেড়েছে। যা অতি দ্রুত প্রতিহত করা একান্ত প্রয়োজন। স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। গত ৫ আগস্টের পর স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ তৈরি হয়েছে। এটিকে ধরে রাখতে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার মত প্রকাশ ও সমাবেশ করার স্বাধীনতার পাশাপাশি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপ না করাকে সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম । এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিডিয়ার স্বাধীনতা দিবেন বলে বক্তেব্যে অঙ্গীকার করেছেন। ফলে কিছুটা হলেও দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিরাজ করছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতা না থাকায় ২০০৯ সালের পর থেকে দেশের সকল ক্ষেত্রে অপরাধ দূর্নীতি চরম হারে বেড়েছে। ভোট বিহীন রাজনীতি,ক্ষমতার দাপট ও লুটপটের কারনে দেশের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৬৫ জন সাংবাদিককে হত্যা কারা হয়েছে, অনেককেই আহত এবং অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকতা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারনে ভয়ে মিডিয়া সরকারী তোশামোদি করতে বাধ্য হয়। গণমাধ্যমকে সাংবাদিকতার বাইরেে বিশেষ এজেন্ডা. বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে । দেশে শুরু হয় অপসাংবাদিকতা এবং রাজনৈতিক সাংবাদিকতার দৌরাত্ব। অনেক বড় মাপের মিডিয়া ও সাংবাদিকরা সে সময় সরকারের সাথে মিশে নিদেদের আখের গুছিয়েছেন। ছিলোনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা । বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যে কারনে গণমাধ্যমের উপর গণমানুষের আস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালীন অনেক গণমাধ্যমের ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারের পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নেয়। গোটা কয়েক সাংবাদিকের জন্য সাংবাদিকরা চরম বিপদের মধ্যে রয়েছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে সাংবাদিকরা সাংঘাতিকে হিসাবে পরিচিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এই পেশাকে স্বাধীনতা দিয়েছে। গণমানুষের পক্ষে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যম কি কখনো সে সুবিধা পাইনি। যারা ক্ষমতায় আসে তারা রাজনৈতিক শক্তি খাটিয়ে সাংবাদিকতাকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছে। এ প্রতিকারের একান্ত প্রয়োজন । ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে চারজন সাংবাদিক শহীদ হয়েছিলেন। আর আগস্টের প্রথম ৪ দিনেই ৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। গত সাড়ে ১৫ বছরে হত্যার শিকার হয়েছেন ৩০ সাংবাদিক। দেড় হাজার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও নির্যাতন করা হয়েছে। ব্যক্তি নাগরিকেরা ক্রমবর্ধমান হারে একটি প্রশ্ন করে যাচ্ছেন অধিকঅংশ সাংবাদিকরা সঠিক কথা এখন আর লিখছেন না। অথচ প্রকৃত সাংবাদিকেরা নিজেদের আত্মরক্ষা করার সুযোগ রাখতে পারছেন না। দলীকরন সাংবাদিকের কারনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হুমকীতে পড়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা মোটেও সহজ নয় এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের অত্যাবশ্যকীয় সমর্থন না পেলে আমলাতান্ত্রিক ও রানৈতিক জটিলতায় হয়তে হারিয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে জেলা পর্যায়ে বা মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকতা করার ঝুঁকি রাজধানীর তুলনায় অনেক বেশি এবং এগুলো অনেকটা নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন সংবাদকর্মী ও বিশ্লেষকরা। প্রতিনিয়তই এখানে সাংবাদিকদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কখনো যারা সরকারি দল তাদের লোকের হাতে, কখনো বিরোধী দলের লোকের হাতে। কখনো প্রশাসনের হাতে। পক্ষে গেলে শুভকামনা, বিপক্ষে গেলে বিভিন্নরকম হুমকি থাকে। কিন্ত সাংবাদিকদের কোন নিরাপ্তা নেই। অথচ প্রকৃত সাংবাদিকরা নিজেদের জীবন বাজী রেখে গনতন্ত্রেকে টিকিয়ে রাখার প্রত্যায় নিয়ে জনসাধারনের জন্য বিনা বেতনে সর্বদা কাজ করছে। সাংবাদিকরা জমিজমা বা দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করতে গেলেই কেউ না কেউ শত্রু হয়ে যাবে এবং প্রতিশোধ নিতে চাইবে। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তারা যেকোন কিছু কাজ করতে পারে। এর মধ্য দিয়েই সাংবাদিকরা কাজ করছে। অথচ সাংবাদিকরা সব সময় সমলোচনার মধ্যে রয়েছে। অনেক সময় সমালোচনা সহ্য করা যায়, অনেক নির্যাতন সহ্য করা যায় না। অনেক সময় নির্যাতন এমন ভাবে আসে তখন সাংবাদিকদেরকরার কিছু থাকে না। আগে টেলিফোনে হুমকি হতো, এখন হুমকিগুলো প্রকাশ্যে হচ্ছে, এটা কোন কোন ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে হুমকি দেয়া হয়, কখনো গোষ্ঠীগতভাবে তাদের হুমকি দেয়া হয়, কখনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারা হুমকি দেওয়া হয়। নানা রকম চাপের মধ্যে সাংবাদিকতা করতে হয়।অনেক সময় স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক শক্তি অনেক সুসংগঠিত হয়ে সাংবাদিকদের নাজেহাল করে ফেলে।এছাড়া গত ১৫ বছর প্রেস ক্লাবের মতো সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে বিভক্তি, নাগরিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও দুর্বলতার কারণেও সাংবাদিকদের ঝুঁকি বেড়েছে । সম্প্রতি তিন দফায় আওযামীলীগের অপরাধের দোসর হওয়ায় দেশের ১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে সরকার। গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশের টেলিভিশন মিডিয়াগুলোর চেয়ে সংবাদপত্রগুলো বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। যদিও কিছু সম্পাদকের গণহত্যার পক্ষে অবস্থান সাংবাদিক সমাজকে লজ্জায় ডুবিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনের সময় স্বৈরতন্ত্রের সহযোগী হিসেবে টেলিভিশন মিডিয়ার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হচ্ছে। এছাড়া একাধিক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্ত অনেক সাংবাদিক বিনা অপরাধে মামলার শিকার হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি অবশ্যই তথ্য উপদেষ্টা কে খতিয়ে দেখার আহবান জানাচ্ছি। আমি বলবো সাংবাদিকদের উপর রাজনৈতিক দাদাগিরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ, গণতন্ত্রের কাঠামো আসলে ক্ষমতার বিভাজন ও সীমাবদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সব অঙ্গ স্বাধীনভাবে কাজ করে, কিন্তু সেটাও এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে সার্বভৌমত্ব জনগণের হাতেই থাকে। হ্যাঁ, শাসকেরা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে যান বা নিকৃষ্টতম শাসকের মতো আচরণ করেন, সেটা ভিন্ন বিষয়। কথা হচ্ছে, গণতন্ত্র যাতে জনগণের স্বার্থে কাজ করে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিচারকদের। আর বিচার বিভাগ সবার ওপরে, নাকি নির্বাহী বিভাগ,সেটা ছিল বিতর্কের মধ্যে। সাংবাদিকদের কাজ রাষ্ট্রের এই অঙ্গগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা। এটা তাঁদের দায়িত্ব। তাঁরা যদি তা করার সাহস না দেখান, তাহলে তা খুব দুর্ভাগ্যজনক হয়। যে টা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাংলাদেশের জনসাধান। সাংবাদিকরা কম যায়নি। আমরা কত উঁচুতে উঠেছিলাম, আর সেখান থেকে কোথায় নেমেছি?আমাদের সাংবাদিকদের সততাই তো প্রশ্নের মুখে পড়েছে, সেই উচ্চমানের কথা আর না-ই বললাম।বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে পেশাদার সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে তাঁরা তো ‘দেখেই’ ফেলেছেন অধিকাংশ খবরা খবর! তাহলে বাংলাদেশে কয়েক হাজার সংবাদ মাধ্যমের উপযোগিতা কতখানি? এদিকে মূলধারার সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যমে অধিক আলোচিত-সমালোচিত, বিশেষ করে অতি প্রভাবশালীরা দ্রুতই বিরক্তি বা ক্রোধ প্রকাশ করেন উভয় মাধ্যমের প্রতি।সাংবাদিক হত্যার বিচারহীনতা ও সাংবাদিকতার জন্য মামলা-হামলার হুমকি অনেককেই সন্ত্রস্ত রাখে। রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হওয়ার অভিযোগের মধ্যেই গণমাধ্যমের কর্ণধারেরা আয়রোজগারের সংকটে পড়েছেন এবং তাঁরা মোটাদাগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অভিসম্পাত করছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পেশা ও শিল্পের লোকদের এই হতাশাজনক কথাবার্তা এক দিকে স্বপরাজিত অভিব্যক্তি তৈরি করছে, অন্য দিকে ক্ষমতাসীনদের জন্য স্বস্তিদায়কও বটে। আমি মনে করি বাংলাদেশে দু-চারটি বিবেকবান গোষ্ঠী বাদে সামাজিক পরিসর, এমনকি শিক্ষাঙ্গন থেকে ক্ষুরধার সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চিন্তাশীল বক্তব্য আসছে না বললেই চলে। সেদিক থেকে ক্ষমতাসীন ও বিত্তশালীদের একটি অংশ ভাবতে পারে, সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেলে তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক। সুতরাং বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে গণমাধ্যমের সংকট নিয়ে যে কান্নাকাটি এবং ক্ষেত্রভেদে মায়াকান্না ও ন্যাকামি, তা কারও কারও কাছে সুখকরই বটে। তবে এখন হয়তো সাংবাদিদের সু-সময় আসতে শুরু করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইতি মধ্যে বাতিল হয়েছে। এই আইন ছিল সাংবাদিকদের জন্য অভিশাপ। এ আইনে নাজেহাল হয়েছেন সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদরা। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো পোস্ট দিলে এই আইনে মামলা হওয়ার বিষয়টি ছিল অবধারিত। সারা দেশে এ ধরনের মামলা হয় অন্তত ১৯০টি। এ আইনকে বিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাঁদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হলেও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক জামিন অযোগ্য মামলার আসামি হতেন। এ ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৯৭ জন সাংবাদিককে কারাবাস করতে হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এক হাজার ৪৩৬টি মামলা করা হয়েছে। দেখা যায়, পাঁচ বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় চার হাজার ৫২০ জন অভিযুক্ত এবং এক হাজার ৫৪৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা জনগণের অধিকার। দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশে এই শিল্পের সংকটকালে ক্ষমতাধরদের যৎকিঞ্চিৎ সমালোচনাকেও শত্রুর দৃষ্টিতে দেখা হয়। যেহেতু আদর্শিক ভাবে সংবাদ মাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত মানুষের বন্ধু; সেহেতু যে আমলা ও রাজনীতিক ক্ষমতার চেয়ারে বসা অবস্থায় গণমাধ্যম কে শাসন করেন, সেই আমলা বা রাজনীতিকই ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ার পর পরিত্রাণ পেতে ও সহানুভূতির আশায় সংবাদ মাধ্যমের শরণাপন্ন হন। তারা অবশ্যই গুরুত্ব দেয় কিন্ত সময় থাকতে দেয় না। যে সামাজিক মাধ্যমকে মনে করা হচ্ছিল ব্যক্তির মুক্তির মাধ্যম, তা শুধু শাস্তিমূলক নজরদারিতেই ব্যবহৃত হচ্ছে না, বরং সত্যকে লুকিয়ে অসত্য, বিকৃত, খণ্ডিত ও মনগড়া তথ্য ছড়াতে তা ব্যবহার করছেন অধিক ক্ষমতাবানেরা। যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে চটকদার খবরের স্বাদ নিচ্ছেন, তাঁরাই আবার প্রধান গণমাধ্যমে ফিরছেন সত্যতা যাচাই করতে। দেশে দৃশ্যত প্রশংসার স্বাধীনতা একটু বেশিই আছে। এ কারণেই হয়তো ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীরাও ‘মিডিয়া কাভারেজ’-এর বাইরে থাকতে চান না। রাজনৈতিক বিত্তশালীরা এখন অধিকাংশ মিডয়া দখল করে রেখেছে। অথচ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় রাজনীতির পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা প্রধানতম। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক বণ্টন ও ব্যক্তি খাতের অগ্রগতিতে গণমাধ্যম গণমানুষকে জাগিয়ে গনতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে। সংবাদমাধ্যমের ক্রমাবনতিশীল অবস্থা আর দুর্নীতির বিস্তার, ভীতির পরিবেশ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ভোট সংস্কৃতির সর্বনাশ দেশের অবস্থা কারে অজানা নয়। তবে সাংবাদিকদের জন্য আরো সুখবর ইতি মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিক কমিশন গঠন করা হয়েছে। জনস্বার্থ বিরোধী প্রতিবেদন তৈরিতে কোন গণমাধ্যম কর্মীকে তার প্রতিষ্ঠান বাধ্য করতে চাইলে অভিযোগ সাপেক্ষে তাকে প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা দেবে গণমাধ্যম কমিশন । আজকের পৃথিবীতে সমাজের স্বার্থে আমাদের সাংবাদিকতার ধারায় পরিবর্তন আনা জরুরি। স্পন্দনশীল গণমাধ্যম ছাড়া গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গড়া অসম্ভব। সাংবাদিকতাও টেকসই হতে পারে, যদি তা হয় মানুষের মালিকানায়, মানুষের কর্মে, মানুষের কল্যাণে। এদিকে বাংলাদেশে সব সাংবাদিকের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রতি যেন যথাযথ সম্মান দেখানো হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা শুরু হয়েছে। তাই আসুন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা প্রদান এবং সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট হই।