রিজার্ভে হাত না দিয়ে, ঋণ পরিশোধ না করেও রিজার্ভ কমছে ৯৮৭.৬২ মিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বুধবার বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ .৮০৭ বিলিয়ন ডলার। গত মাসে যেখানে রিজার্ভ ছিল ২০.৭৯৫ বিলিয়ন ডলার।
যদিও দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র গুলোর প্রকাশিত খবরে দেখানো হয়েছে রিজার্ভ বেড়েছে ৫৫৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের পদ্ধতিতে করা, যার সম্পূর্ন অর্থ ব্যাবহারযোগ্য নয়, কিছু ঋন হিসাবে দেয়া হয়েছিল শ্রীলংকাকে এবং বাকি কিছু কিছু নির্দিষ্ট প্রকল্প খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আইএমএফ এর হিসাব পদ্ধতিতে যে অর্থ ব্যাবহারযোগ্য সেটাকেই প্রকৃত রিজার্ভ হিসেবে ধরার প্রচলন ছিল বিগত কয়েকবছর, যখন থেকে বিপিএম-৬ পদ্ধতি চালু হয়।
২৩শে অক্টোবর ২০২৪ এ ব্যাবহার যোগ্য রিজার্ভের পরিমান ১৯.৮০৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর এই সময়ে ছিল ২০.৮৫৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রিজার্ভে হাত না দিয়ে ঋন পরিশোধ না করেও রিজার্ভ কমছে। আগস্টে সরকার পতনের পরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের যে উষ্ফালন দেখা গিয়েছিল, সেই রেমিটেন্সে কিছুটা ভাটা পরার কারনেই রিজার্ভের এই পতন, বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভাটা সত্ত্বেও বিগত সরকারের আমলে সর্বোচ্চ রিজার্ভের স্থিতি ছিল জুন, ২০২৪ এ। যখন বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬.৭১৪ বিলিয়ন ডলার এবং আইএমএফ এর পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২১.৬৮৬ বিলিয়ন ডলার।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে; তখন রিজার্ভ আরও কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। রেমিটেন্স বাড়ায় এবং আমদানি ব্যয় কমায় গত দেড় মাসে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এই সপ্তাহে সেই রিজার্ভ কমে ফের নিম্নমুখী হয়েছে।
গত অর্থবছরে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় আর এই বছরের রপ্তানি আয়ে খুব একটা হেরফের হয় নি। গত বছর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় ছিল ৩.৫১৪ বিলিয়ন ডলার, সেখানে একই সময় এই বছর রপ্তানি আয় এসেছে ৩.৬৭৮ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। গতবছর সেপ্টেম্বরে যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ১.৩৩৪ বিলিয়ন ডলার, সেখানে এই বছর সেপ্টেম্বরে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রায় দ্বিগুন, ২.৪০৪ বিলিয়ন ডলার। জুলাই থেকে আগস্টের হিসাবে শুধুমাত্র প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গত বছর থেকে এবছর বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩.৩৪%।
আমদানী ব্যায়ের হিসাবে গত বছরের আর এই বছরের হিসাবে খুব একটা হেরফের হয় নাই। গত বছরের তুলনায় এবছর একইসময়ে আমদানী কমেছে ১.১৬%।
একইসাথে কমেছে রেভিনিউ। গতবছর জুলাই আগস্টে যেখানে অভ্যন্তরীণ আয় ১২.৪৭% বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ৭৫ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, সেখানে একইসময়ে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এ রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, হ্রাস পেয়েছে ৬.০৭%।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকু’র সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের বিল পরিশোধ করতে হবে। এবার কি পরিমাণ বিল শোধ করতে হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চলতি অক্টোবর শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে। সেই বিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রাথমিক হিসাব দিয়েছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আকুর বিল জুলাই-আগস্ট মাসের মতোই ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো হবে।
সে হিসাবে এবার আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ১৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে বলে হিসাব কষছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা।