এইচএসসিতে ফেল করা একদল শিক্ষার্থীদের অটো পাস করানোর দাবির মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন।
রোববার রাতে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার পদত্যাগ চেয়েছে। আমি পদত্যাগ করলে যদি তারা আন্দোলন স্থগিত করে তাহলে আমি পদত্যাগই করবো। সোমবার আমার পদত্যাগপত্র জমা দেবো।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার নিচে এসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সামনে সরকার তথা শিক্ষা বোর্ডের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, তোমরা আজকের মতো বাসায় চলে যাও। যারা আন্দোলন করেছো, দাবি জানিয়েছো- বিষয়টি নিয়ে সরকার আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে। তোমাদের ওপর আজকে যারা এখানে হামলা চালিয়েছে বা মারধর করেছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু এসময় শিক্ষার্থীরা দাবি করে, রাতেই ফল বাতিলের ঘোষণা দিতে হবে। সবাইকে অটোপাস দিতে হবে। তা না হলে তারা সেখান থেকে বের হবেন না।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সামনে জড়ো হয় এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে তারা তালা ভেঙে বোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের কক্ষে চলে যান। সেখানে ভাঙচুরও চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়।
সেসময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন ছাত্রীসহ ১১ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হামলায় বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানান।
১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। অর্থাৎ এসএসসিতে যে শিক্ষার্থী যত নম্বর পেয়েছিলেন, সেটা এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এ দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইতোমধ্যে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ জন্য এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সব বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল নতুন করে প্রকাশ করতে হবে।
তাদের দাবি, ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক ফল বাতিলসহ দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে সমভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে পুনরায় ফল প্রকাশ করতে হবে।
এদিকে এদিন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে ফল বাতিল করে সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি করেছে এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বোর্ডের ফটকে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গত এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য সব শিক্ষার্থীদের পাসের দাবিতে শিক্ষা বোর্ডের সামনে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।
রোবাবর সন্ধ্যার পর শিক্ষা বোর্ডের সামনে রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে তারা।
গত ১৫ অক্টোবর চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।