ঢাকা ওয়াসায় আউটসোর্সিং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কথিত সিবিএ নেতা আজিজ ও মনির পাটুয়ারীসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের সহযোগিতায় এ চক্র ওয়াসাকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।
গত ২৫/০৮/২৪ ইং তারিখে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারদের উপস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসার তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম শহীদ উদ্দিন, আউটসোর্সিং নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে স্মারক নং ২০২৪/৩৫/সি এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (পাস ২) বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করেন। তথ্য মতে, ঢাকা ওয়াসায় ইতিমধ্যে রাজস্ব পরিদর্শক / বিলিং সহকারি পদে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে। বিভিন্ন জোনগুলোতে দায়িত্ব বিহীন বসিয়ে বসিয়ে বেতন প্রদান করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার সারাদেশে আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগে নিরুৎসাহিত করলেও, ঢাকা ওয়াসায় উল্টোভাবে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নতুন কর্মী নিয়োগ চলছে। যেখানে সাবেক এমডি আউটসোর্সিং বাতিল করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এর জন্য সুপারিশ করেছেন সেখানে গত ১/০৯/২৪ ইং তারিখে ৩০ থেকে ৪০ জন এবং নভেম্বর ২৪ ইং মাসের মাঝামাঝি সময় আরো ৯৩ জন আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুষের টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কেন্দ্রীয় সিবিএ নেতা এবং আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তড়িঘড়ি করে পরবর্তী ধাপে নিয়োগ পাওয়া ৯৩ জনকে কিছুদিন অফিস করার পর ২৫/১১/২৪ ইং হতে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করা হয়। ফোন কলের মাধ্যমে তাদেরকে জানানো হয় তাদের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপের ৩০-৪০ জন এখনো বহাল তবিয়তে জোনাল অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। এই নিয়োগের বিষয়ে গত ০৬/০৯/২৪ ইং তারিখে দৈনিক যুগান্তর সংবাদপত্রে, স্থায়ী হচ্ছে ২৫ শ আউটসোর্সিং কর্মচারী এই শিরোনামে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায় জনপ্রতি ৮-১০ লাখ টাকার বিনিময়ে আউটসোর্স কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িস ইউনিয়নের সভাপতি আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মনির পাটুয়ারী ঘুষের টাকায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজিজ একজন রাজস্ব পরিদর্শক হলেও তার জীবনযাত্রা মন্ত্রী-এমপিদের চেয়েও বিলাসী। রাজধানীর মন্ত্রী পাড়া নামে খ্যাত বেইলী রোডে আলিশান বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করেন সিবিএ নেতা আজিজ। সিলেটে বিশাল বাগানবাড়ি, রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি, বিলাসবহুল গাড়ি এবং নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক মনির পাটুয়ারী, যিনি পেশায় একজন পাম্প চালক, তার রয়েছে ঢাকার মিরপুরে ৬ তলা বিলাসবহুল বাড়ি বাড়ি নং ৩ রোড ৭, ব্লক এফ সেকশন ২ মিরপুর ঢাকা। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় রয়েছে বিপুল সম্পদ। তার আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠজনদের বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ডিপোজিট।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িস ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা তা মানছেন না। একাধিক পাম্প চালক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়েছেন, এরা স্ব ঘোষিত সিবিএ। আজিজ ও মনির ৩১৮৫ এর কোন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধী নয়। তাদের কমিটির বৈধ কাগজপত্র নেই। এরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দাবি-দাওয়াকে উপেক্ষা করছেন। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যমে লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের দুর্ব্যবহার এবং ঘুষ বাণিজ্যের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।
দুর্নীতির এ চিত্র ওয়াসা প্রশাসনের নাকের ডগায় চললেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতে বর্তমান প্রশাসনের যোগসূত্র রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। এর ফলে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের বর্তমান উপদেষ্টা জনাব আসিফ মোহাম্মদ সজীব ভূঁইয়া বরাবর সকল বিষয় অবহিত করে আবেদন জমা দেওয়া হবে।
দ্রুত তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনা না হলে শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানের সুনাম আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।