গত ০৪ আগস্ট ফেনীর মহিপাল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র-জনতার উপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিডিও পর্যালোচনা করে গুলিবর্ষণকারী ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি লিটন’কে রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ০৪ আগস্ট ২০২৪ সকাল ১০ ০০ মিনিটে ফেনী জেলার মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে। উক্ত কর্মসূচিতে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ছাত্র জনতার সাথে ভিকটিম জয়লস্কর স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ওয়াকিল আহমদ শিহাব (১৭) অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় ফেনীর মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরী এবং সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীদের প্ররোচনায় ও নির্দেশে অপরাপর কতিপয় আসামি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে এবং ১২-১৪টি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় ভিকটিম ওয়াকিল আহমদ শিহাব আহত অবস্থায় প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মহিপাল প্লাজা মার্কেটে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলে আসামিগণ ভিকটিমের মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৮-১০টি গুলি করায় ভিকটিম আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা পুনরায় ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি-সোঠা, লোহার রড, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মাতা এবং ছাত্র-জনতা ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম ওয়াকিল আহমদ শিহাবকে মৃত ঘোষণা করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মাতা বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় ১৫১ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪, তারিখ-২০ আগস্ট ২০২৪ ইং, ধারা- ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০৭/ ৩০২/১১৪/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিষ্ফোদ্রব্যাবলি আইনের ধারা-৩/৬।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপাল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে প্রাপ্ত ভিডিও পর্যালোচনা করে গুলি চালানো ব্যক্তিটি ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি লিটনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি ভিডিও পর্যালোচনায় শনাক্তকৃত ব্যক্তি ওসমান গনি লিটন রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এবং র্যাব-১, ঢাকা এর যৌথ আভিযানিক দল গত ০১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি লিটন (৩০), পিতা-জয়নাল হাজারী, ফেনী পৌরসভা, থানা-ফেনী সদর, জেলা-ফেনীকে রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত নাম ঠিকানা প্রকাশ করতঃ উক্ত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়াও, মামলা রুজু হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিকট থেকে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।