মজিবল হক নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার দত্তেরহাট এলাকার একজন ট্রাকের শ্রমিক। ২০১৩ সালে তার ছেলে ভিকটিম মোঃ খোকন (১৭) ট্রাক ও লরি শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। ২৮/০২/২০১৩ইং তারিখে বিএনপি ও জামায়াত দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহবান করে। উক্ত কর্মসূচির অংশ হিসাবে নোয়াখালী জেলা বি.এন.পি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমর্থকগণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার জন্য নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার অন্তর্গত নোয়াখালী পৌরসভার দত্তের হাট দত্ত বাড়ীর মোড়ে জমায়েত হয়। তারা তাদের লোকজন সহ দত্ত বাড়ীর মোড় হতে দত্তের হাটের দিকে রওয়ানা হয়। ভিকটিম খোকন নিজ বাড়ি হতে দত্তের হাট শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে যাওয়ার পথে দত্তের হাটের দক্ষিণ দিকের সরকারী গুদামের পাশের পেট্রোল পাম্পের সামনে হয়ে সোনাপুর মাইজদী সড়কের প্রধান সড়কে গেলে সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী সহ আরো চারজন আসামীদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এজাহারনামীয় সকল আসামীগণ সহ অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জন আসামী হাতে দা, ছেনী, লোহার রড, লাঠি-সোটা আগ্নেয়াস্ত্র, পাইপ গান, দেশী বিদেশী বিভিন্ন অস্ত্র সস্ত্র নিয়া পূর্ব পরিকল্পনা মতে বিএনপি জামায়েতের শান্তিপূর্ণ মিছিল দত্তের হাট পোলের কাছাকাছি এলে এজাহারনামীয় বিশজন আসামীর নির্দেশে ও হুকুমে এজাহারনামীয় সকল আসামী উক্ত বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশের লোকজনের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করে। তখন আসামীগণ তাদের হাতে থাকা আগ্নেযন্ত্র হইতে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। উক্ত গুলির আঘাতে ভিকটিম খোকন গুলিবিদ্ধ হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় দত্তের হাট পুলের কাছে রাস্তায় ভিকটিম গুরুতর জখম হয়ে পড়ে থাকে। আসামীগণের গুলি এবং বোমা ও ককটেলের বিস্ফোরনের শব্দে স্থানীয় লোকজন দিকবিদিক ছুটাছুটি করে। এজাহার নামীয় আসামীরা ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন দোকান পাট ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে। গোলাগুলি ভাংচুরের শব্দে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাড়ি হতে ঘটনাস্থলে এসে বাদী তার ছেলে খোকনকে রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় তার কাছ থেকে হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন। তখন আসামীগণ বাদীকে মারধর করে তার গুরুতর আহত ছেলে খোকনকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং খোকনকে মৃত ভেবে আসামীরা তার লাশ গুম করার জন্য পাশ্ববর্তী ময়লা যুক্ত খালে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। তখন বাদী সহ স্থানীয় লোকজন বাধা প্রদান করলে আসামীগণ দৌড় দিয়ে চলে যায়। পরে ভিকটিম খোকনকে চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার খোকনকে মৃত ঘোষণা করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে নোয়াখালী জেলার সুধারাম মডেল থানায় ৫৩ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১৩, তারিখ- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং, ধারা- ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/২০১/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনের ধারা- ৩/৬।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এবং আসামিদের সংক্রান্তে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানা এলাকার আব্দুল মালেক লেন এর একটি ভবনে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি চৌকস আভিযানিক দল অদ্য ০১ অক্টোবর ২০২৪ রাত ১১:১০ মুনিটে বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী (৬২), পিতা- মৃত হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া, সাবেক এমপি, সাং- সুন্দলপুর, ০৭নং ওয়ার্ড, সুন্দলপুর ইউপি, থানা- কবিরহাট, জেলা- নোয়াখালী’কে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানা এলাকার আব্দুল মালেক লেন এর একটি ভবন থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বর্ণিত নাম ঠিকানা প্রকাশ করতঃ উক্ত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এছাড়াও, মামলা রুজু হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিলেন বলে জানান। আসামির পিসিপিআর যাচাই করে নিম্নবর্ণিত মামলার রেকর্ড পাওয়া যায়:
ক) নোয়াখালী এর কবিরহাট থানার এফআইআর নং-৩, তারিখ- ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪; জি আর নং-৭১, তারিখ- ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ধারা- 19 (1) The Arms Act 187.
খ) নোয়াখালী এর সুধারাম মডেল থানা থানার এফআইআর নং-১৩, তারিখ- ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪; জি আর নং-৩৯০, তারিখ- ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪; ধারা 147/148/149/302/201/34 The Penal Code, 1880: তৎসহ 3/6 The Explosive Substances Act, 1908
গ) নোয়াখালী এর সোনাইমুরি থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ- ২০ আগস্ট, ২০২৪; জি আর নং- ১৩৮, তারিখ- ২০ আগস্ট, ২০২৪; সময়-
১৬.৩০ ঘটিকায়। ধারা- 147/148/302/34/114 ThePenal Code, 1860
ঘ। ডিএমপি এর আদাবর থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ- ২২ আগস্ট, ২০২৪; জি আর নং- ২০৩, তারিখ- ২২ আগস্ট, ২০২৪; ধারা- 302/109/114/1208/143/148/149/153/34 The Penal Code, 1860
৩। নোয়াখালী এর সুধারাম মডেল থানা থানার এফআইআর নং-২৭, তারিখ- ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪; জি আর নং-৪০৪, তারিখ- ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪; ধারা-143/341/324/326/364/307/506 (2)/ 34 The Penal Code, 1860 তৎসহ 3/6 TheExplosive Substances Act, 1908
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে নোয়াখালী জেলার সুধারাম মন্ত্র অধিযাচনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।