চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া এলাকায় নৃত্যের তালে তালে গান গেয়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের পলাতক আসামি মেহেদী হাসান সাগর এবং মোঃ শান্ত’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
নিহত ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেন (২৪) নোয়াখালী জেলার মৃত হারুনের ছেলে। সে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা এলাকায় তার স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল এবং বিআরটিসি ফলমন্ডিতে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গত ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখ দুপুর ০২.০০ মিনিটে প্রতিদিনের ন্যায় ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেন তার ভাড়া বাসা হতে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাহির হয়। ঐ দিন সন্ধ্যা ০৭.০০ মিনিটে ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেনকে তার স্ত্রী ফোন করে বাসায় আসতে বললে সে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসবে বলে জানায়। পরবর্তীতে ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেন বাসায় ফিরে না আসায় এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার স্ত্রী সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থান সহ আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোঁজাখুঁজি করে তার কোন সন্ধান পায়নি। পরবর্তীতে গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে রাতে ০৯.৩০ মিনিটে ভিকটিমের চাচা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখতে পান যে, তার ভাতিজা মোঃ শাহাদাত হোসেন মৃত অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনা শাহ্ মাজার সংলগ্ন সিএসসিআর হাসপাতালের সামনে রাস্তার উপর পড়ে আছে। পরবর্তীতে নিহত ভিকটিমের স্ত্রী, চাচা এবং পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের চাচা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানায় আজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১৩, তারিখ- ১৫ আগস্ট ২০২৪ইং, ধারা- ৩০২/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০। গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এক যুবককে দুই হাত বেঁধে গান গেয়ে নাচের তালে তালে উচ্ছৃঙ্খল কিছু জনতার মারধরের একটি ভিডিও পুলিশের নজরে আসে। ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের হলেও জানাজানি হয় গত ২১ সেপ্টেম্বর। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মোঃ শাহাদাত হোসেনের দুই হাত দুই পাশে স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে কিছু যুবক গান গেয়ে গেয়ে তাকে মারধর করছে। সেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে থানা পুলিশ জানতে পারে যে, মারধরের শিকার হতভাগ্য যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন। নিহত শাহাদাত হোসেনের স্ত্রীকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। ভিকটিমের স্ত্রী থানায় এসে ঐ ভিডিও দেখে ভিডিও চিত্রের যুবকটি তার স্বামী বলে শনাক্ত করেন। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম সূত্রে বর্ণিত মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারির এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত পলাতক আসামি মেহেদী হাসান সাগর চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের সামনে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ০৮.৩০ মিনিটে বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মেহেদী হাসান সাগর (২৮), পিতা- এমএস দুলাল, সাং- গরীবুল্লাহ সাহেব ডোবারপাড়, থানা- খুলশী, জেলা- চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য মতে আভিযানিক দলটি সনবধ্যা ০৮.৫০ মিনিটে খুলশী থানাধীন জামতলা এলাকা হতে ভাইরাল ভিডিওতে শনাক্তকৃত আসামি মোঃ শান্ত (২৮), পিতা- নুর ইসলাম, সাং- গরীবুল্লাহ সাহেব ডোবারপাড়, থানা- খুলশী, জেলা- চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভিকটিম মোঃ শাহাদাত হোসেনকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গত ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আসামি মেহেদী হাসান সাগর ভিকটিম শাহাদাত হোসেনকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তাকে অপহরণ করে ভিকটিমের স্ত্রী’র নিকট মুক্তিপণ দাবি করে মর্মে জিজ্ঞাসাবাদে আসাম স্বীকার করে। এছাড়াও, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত অপর আসামি মোঃ শান্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাদেরকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।