পদত্যাগে রাজী না হওয়া প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে পড়লেন আন্দোলনরত ওই বিদ্যালয়ের ১৪ বছর বয়সী ইকরামুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থী।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এমন একটি ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দেবীদ্বার উপজেলার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওইদিন শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করার পর পক্ষে- বিপক্ষে বাকবিতন্ডা ও ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে প্রশাসনের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
পরে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ইকরামুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে যায়। ইকরামুল স্থানীয় কুরুইন গ্রামের আবুল হাসমের ছেলে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে মিস্ত্র প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষোভ দেখা দেয়।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, টেবিলের ওপর থাকা প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেনের টেবিলে রাখা নেম প্লেট সামনে রেখে স্কুল ড্রেস ছাড়া চেক শার্ট পড়া পোশাকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে আছে ছাত্র ইকরামুল।
এ ছবিটি নিজের ফেসবুকেই প্রথম আপলোড করেন এবং তিনি লিখেন, ‘আমাদের সু-সম্মানিত আলমগীর স্যার কোথায়।’ ওই ছবিসহ একাধিক ব্যক্তির পোস্ট করা ষ্ট্যাটাচে শিক্ষা ব্যবস্থার করুন চিত্রসহ নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য উঠে আসে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল-প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ করেন ও বিদ্যালয়ের অর্থে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাই তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। খবর পেয়ে সকালে দেবীদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম এবং দুপুরের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি নিগার সুলতানা সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে ছাত্র ইকরামুল হাসান বলেন, ‘সবাই অফিস কক্ষ ত্যাগ করার পর আবেগে চেয়ারে বসে ছবি তুলি, এটা আমার ঠিক হয়নি, সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার ফেসবুক থেকেও তা বাদ দিয়েছি।’
প্রধান শিক্ষক কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহলের প্ররোচনায় ছাত্রদের মিথ্যে অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামিয়ে দেয়। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি- আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই, কোথায় এ দলের সদ্য পদও নাই। দেবীদ্বারে নাকি আমার দুটি বাড়ি আছে, তাও তাদের প্রমাণ দিতে বলেছি, ওরা প্রমাণ দিতে পারেনি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৮টায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,- ঘটনার দিন সংবাদ পেয়ে আমি সেনাসদস্যসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে আনি।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা বিধি-মোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অফিস থেকে বের হওয়ার পর তারই ছাত্র চেয়ারে বসে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেওয়ার যে ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। কোনো বিবেকবান ও সুস্থ ছাত্র এটা করতে পারে না।