গত ২৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ বিকেল ০৩.৩০ মিনিটে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় র্যাব
পরিচয়ে বিকাশের কর্মচারীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায়
র্যাব ১১ অভিযান চালিয়ে ০৯ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়।
র্যাব ১১, সিপিসি ২, শাকতলা র্যাব অফিসে এক সংবাদ
সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য প্রদান করেন।
র্যাব জানায় যে র্যাব পরিচয়ে বিকাশ কর্মচারীদ্বয়ের নিকট থেকে ২৫,৯২,০০০/- টাকা বলপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। উক্ত ঘটনায় বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার বাদী হয়ে দন্ডবিধি আইনে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-৩০, তারিখঃ ৩০ অক্টোবর ২০২৪। উক্ত ডাকাতির ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বর্ণিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে
র্যাব। তদন্তের এক পর্যায়ে, উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজন ডাকাতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, উক্ত ডাকাত দলের সদস্যরা কুমিল্লা জেলায় চান্দিনা থানা এলাকায় পুণরায় ডাকাতির পরিকল্পনা করছে। এ প্রেক্ষিতে উক্ত ডাকাত দলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র্যাব-১১ কর্তৃক গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে গত ০৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ রাতে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর জনৈক ০২ জন ব্যক্তি ডাকাতির শিকার হয়েছে এবং ডাকাত দল ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছে মর্মে স্থানীয় সোর্স তথ্য প্রদান করে। এপ্রেক্ষিতে উক্ত ডাকাত চক্রকে হাতে নাতে গ্রেফতারের লক্ষ্যে
র্যাব ১১ এর একটি অভিযানিক দল তৎক্ষনাত কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত ০৯ জন আসামীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিরা হলো ১৷ গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বজ্রাকুঞ্চি এলাকার কাছু শেখের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম(৩২), ২৷ গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকার নাছির আলীর ছেলে মোঃ সাজু মিয়া(৩৩), ৩৷ মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ইমামপুর এলাকার রবিউল আউয়ালের ছেলে মোঃ রিযাদ(১৯), ৪। বি,বাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার থানারকান্দি এলাকার তপদর হোসেনের ছেলে মোঃ রবিউল(২৬), ৫৷ মাদারিপুর জেলার শিবচর থানার টেংরামারি এলাকার আলী আকবরের ছেলে মোঃ মানিক (৪০), ৬৷ নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার দক্ষিণ কুল চরিত্র এলাকার আবুল কালামের ছেলে মোঃ রিপন সরদার(২৯), ৭৷ গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কালিরখামার এলাকার গয়শল বেপারির ছেলে মোঃ সাজু(৪৪), ৮৷ পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস এরাকার আব্দুল হক হাওয়লাদার এর ছেলে মোঃ রিপন হাওলাদার(৪৫), ৯৷ মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর এলকার আজিজুর রহমানের ছেলে মোঃ সজিব(৩৫)৷
এ সময় আসামীদের হেফাজত হতে নগদ- ৩৫,৩৫৮/- টাকা, ০৩ টি র্যা ব জ্যাকেট, ০১ টি নকল পিস্তল, ০১ টি পিস্তল কভার, ০১ টি স্বর্ণের চেইন, ০২ টি আংটি, ০১ টি ইলেকট্রিক শকার, ০২ টি ওয়াকিটকি, ০৭ টি মোবাইল, ০২ টি র্যা ব মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার, ০১ টি লাঠি, ০৩ টি টর্চলাইট, ০১ টি ওয়ারলেস টকিং টুল, ০১ টি হ্যান্ডকাফ, ০৮ টি মানিব্যাগ, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ০১ টি নোহা প্রাইভেটকার ও ০১ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত ডাকাতির সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি আন্তঃ জেলা ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩২)। এই চক্রে ১০/১২ জন সদস্য রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের নেতা সাইফুল এর নেতৃত্বে তারা প্রায় ১/২ বছর যাবৎ কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায়, গত ২৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ বিকাল ০৩.৩০ মিনিটে দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন কালী কৃষ্ণনগর এলাকায় চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী রাস্তার উপর পূর্ব হতে মাইক্রোবাস নিয়ে অবস্থান করছিল। এসময় বিকাশের দুই কর্মচারী তাদের সাথে থাকা টাকা নিয়ে কান্দিরপাড় অফিসে পৌছানোর জন্য প্রাইভেটকার যোগে ঐ একই রাস্তা ব্যবহার করে কুমিল্লা শহরের দিকে আসছিল। একটি মোটরসাইকেল যোগে ডাকাত দলের ০২ জন সদস্য পূর্ব থেকেই বিকাশের প্রতিনিধিদ্বয়কে অনুসরণ করে ভূক্তভোগীদের অবস্থানের তথ্য ডাকাত দলের নেতাকে সরবরাহ করে যাচ্ছিলো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডাকাত নেতা সাইফুলের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত আসামীরা হাইয়েস গাড়ি ব্যবহার করে বিকাশ কর্মচারীদের প্রাইভেটকারকে অনুসরণ করতে থাকে এবং সুযোগ বুঝে বিকাশ কর্মচারীদের পথরোধ করে। এসময় ডাকাত দলের ৩/৪ জন সদস্য তাদের গাড়ি থেকে নেমে বিকাশ কর্মচারীদের নিকট হতে টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং বিকাশ কর্মচারীদ্বয়কে জিম্মি করে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। পরবর্তীতে বিকাশের কর্মচারীদ্বয়কে গাড়ির ভেতরে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে একসময় তাদের হাত-পা বেধে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা এলাকায় ফেলে চলে যায়।
র্যাব ১১ জানায় তাদের পিসিপিআর চেক করে জানতে পারে যে, গ্রেফতারকৃত আসামী সাইফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে পূর্বে রুজুকৃত নিম্নবর্ণিত মামলা সমূহ রয়েছেঃ
১। গাইবান্ধা এর সুন্দরগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৮, তারিখ- ০৬ জুন ২০১৫; ধারা- ৩৮৭/৩২৩/৩২৪/৩৮০/৩৫৪, পেনাল কোড-১৮৬০
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মানিক এর বিরুদ্ধে পূর্বে রুজুকৃত নিম্নবর্ণিত মামলা সমূহ রয়েছেঃ
১। গাজীপুর এর কালিয়াকৈর থানার এফআইআর নং-১৮/২৯২, তারিখ- ০৮ জুন ২০২১; ধারা- ১৭০/৩৯৪, পেনাল কোড-১৮৬০
২। মুন্সীগঞ্জ এর শ্রীনগর থানার ,এফআইআর নং-২৯, তারিখ- ২৩ নভেম্বর, ২০২৩; ধারা- ১৭১/৩৯৪, পেনাল কোড-১৮৬০
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রিপন হাওলাদার এর বিরুদ্ধে পূর্বে রুজুকৃত নিম্নবর্ণিত মামলা রয়েছেঃ
১। ফেনী এর দাগনভূইঞা থানার এফআইআর নং-১১/১৪৩, তারিখ- ২১ অক্টোবর ২০২০; ধারা- ৩৯৫/৩৯৭, পেনাল কোড-১৮৬০
গ্রেফতারকৃত আসামী সজিব (৩৫) এর বিরুদ্ধে পূর্বে রুজুকৃত নিম্নবর্ণিত মামলা সমূহ রয়েছেঃ
১। ডিএমপি এর মতিঝিল থানার এফআইআর নং-৪২/৩২৪, তারিখ- ১৯ জুলাই ২০১৮; ধারা- ১৭০/১৭১/৩৯৯/৪০২, পেনাল কোড-১৮৬০।
২। ডিএমপি এর কদমতলী থানার এফআইআর নং-২৮/১৭১, তারিখ- ১০ মার্চ ২০১৭; ধারা- ১৯-এ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন।
৩। ডিএমপি এর কদমতলী থানার এফআইআর নং-২৯/১৭২, তারিখ- ১০ মার্চ ২০১৭; ধারা- ১৭০/১৭১/৩৯৯/৪০২/৩৪,পেনাল কোড-১৮৬০।
৪। মুন্সীগঞ্জ এর গজারিয়া থানার এফআইআর নং-৯, তারিখ- ১৯ মার্চ ২০১৫; ধারা- ১৯(১) এর ৯(খ) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।