আজ ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে রোজ বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা উপ-আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের সামনে সাবেক ২৫৬ কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনঃবহালের দাবীতে স্থানীয় জনতা এই মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান করেন।
এসময় মানববন্ধনে উপস্থিত বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত ২০০৮ সালে ৮৪টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হলেও বাস্তবে ৩শ’ আসনের মধ্যে ১৩০টিরই পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল আইন লঙ্ঘন করে অসৎ উদ্দেশ্যে। আঞ্চলিক অখণ্ডতাভিত্তিক প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় না এনে শুধু জনসংখ্যাকেই গুরুত্ব দিয়েছিল।
ওই-সময় প্রায় চার হাজার আপত্তি পড়লেও তা আমলে নেয়নি তৎকালীন কমিশন। এভাবে আসন ব্যাপক রদবদল করার ফলে সারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে গ্রামাঞ্চলের জনগণ। বঞ্চিত হয়েছি আমরা কুমিল্লা দক্ষিণের মানুষ ।
২০০৮ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়কের সময়ে অসৎ উদ্দেশ্যে আসন বিন্যাস করতে গিয়ে সমস্ত দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব করেছিল তৎকালীন হুদা কমিশন।
১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সারা দেশের সংসদীয় আসনগুলো একইরূপে থাকলেও ২০০৮ সালে এসে হঠাৎ করে ব্যাপক রদবদল আনে তৎকালীন কমিশন। ফলে ঐতিহ্যবাহী আসনগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়। যেসব আসনে দীর্ঘদিন ধরে সেনা-সমর্থিত সরকার ও তার সমর্থকদের বিপক্ষের রাজনীতিকরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল কেবল সেসব আসনই পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কোনো আপত্তি বা মামলা আমলে নেয়নি তৎকালীন কমিশন। যদিও আসনগুলো পুনর্বিন্যাস করার জন্য অসংখ্য আবেদন জমা পড়েছিল কমিশনে। অধিকাংশ আবেদনে বলা হয়েছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কমিশন সীমানা পুনর্বিন্যাস করে। এতে একটি রাজনৈতিক দলই বেশি লাভবান হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগণ।
১৯৭৬ সালের সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আদমশুমারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের জন্য পুনরায় আসনসমূহের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। ৬ ধারায় বলা আছে, আঞ্চলিক ভিত্তিক প্রশাসনিক সুবিধার বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে এবং তা করতে গিয়ে যতদূর সম্ভব সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদনের জনসংখ্যার বিভাজনও বিবেচনায় রাখতে হবে’। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে ১৯৭৬ সালের সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ অমান্য করেছিল বিগত কমিশন। কমিশন সেই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিল।
যে ১৩০টি আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল সেসব এলাকা থেকে ২০০৮ সালের জুনের দিকে ৩ হাজার ৬৯০টি আপত্তি জমা পড়ে। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার আপত্তিগুলো আমলে নেয়নি কমিশন। পরে শুনানি শেষে সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশ এর ধারা ৬ (৪) অনুযায়ী আপত্তিগুলো খারিজ করে ১৩০টি সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে ২০০৮ সালের ১০ই জুলাই গেজেট প্রকাশ করে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৫ (ক) অনুযায়ী, সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণ কিংবা অনুরূপ নির্বাচনী এলাকার জন্য আসন বণ্টন সম্পর্কিত যেকোনো আইনের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপিত করার সুযোগ নেই। তবে সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ১৩টি মামলা হয়।
এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদের সভাপতি এডভোকেট আখতার হুসাইন, সদর দক্ষিণ উপজেলা বি এন পির সদস্য সচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, আমান উল্লাহ চেয়ারম্যান, সাবেক সদর দক্ষিণ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমাইল মজুমদার, ওমর ফারুক সুমন চেয়ারম্যান, লালমাই উপজেলা বি এন পির সদস্য সচিব ইউসুফ আলী মীর পিন্টু, আমান উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর জামাল হোসেন, জামাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন সহ সাবেক এই আসনের হাজার হাজার জনগণ।