অনুসন্ধানী রিপোর্ট//
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লা পুলিশ লাইন ও আশপাশ এলাকায় পেছন থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানো ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এমনকি তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধারে এখনো কোন ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ওই দিনের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে ৬ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ এবং অন্তত ২৫ জনের মতো আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ৪ আগষ্ট প্রথম আলো, যুগান্তর, মুক্ত খবর ও আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকাসহ কয়েকটি টেলিভিশনে নিউজ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। সে দিন আন্দোলনরতন শিক্ষার্থীদের ওপর পিছন থেকে অতর্কিতভাবে যে সব ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছিলো তাদের মধ্যে অন্তত ডজন খানিক নামের তালিকা দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনের হাতে এসেছে। যাদের নিকট থেকে সেই সব অবৈধ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এমনকি তাদেরকে আইনের আওতায়ও আনা হয়নি। সন্ত্রাসীরা হলো নগরীর শাসনগাছার- ১, মধ্যপাড়া এলাকার ইকবাল মিয়ার ছেলে সাক্কু মিয়া ২, মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে কাজী ইকবাল হোসেন ৩, মৃত চুন্নু মিয়ার ছেলে আনিসুর রহনান ওরফে টিটু ৪, মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে শহিদ মিয়া ৫, মৃত ইসমাইল মিয়ার ছেলে শাওন ৬, মৃত চুন্নু মিয়ার ছেলে মিঠু মিয়া ৭, মৃত বাবুল মিয়ার ছেলে অনিক মিয়া ৮, মির্জাপাড়া এলাকার দৌলত মিয়ার ছেলে মামুম মিয়া ৯, হুরুন মিয়ার ছেলে খোসরু ১০, শাসনগাছা এলাকার মোল্লা বাড়ির শাহ আলমের ছেলে জনি ১১, কাপ্তানবাজার এলাকার যুবলীগের নেতা খন্দকার আমান ১২, নগরীর গোবিন্দপুর এলাকার নাঈম, ১৩৷ ২২ নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা উত্তর রামপুরের খোকন মিয়ার ছেলে মেহেদি এদের সবার মাষ্টারমাইন কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহারের বিশ্বস্ত, অনুগত ও মদদপৃষ্ট আদর্শ সদর উপজেলার নবাগত ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নেয়াজ পাবেল। একাধীক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৫ আগষ্ট (সোমবার) শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে হঠাৎ পালিয়ে যাওয়ার খবরে দলের সকল নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও ভীতি কাজ করছিলো। এমতাবস্থায় আহমেদ নেয়াজ পাবেল নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে শাসনগাছা এলাকার তার বাসা থেকে বাইকের পিছনে বসে পালানোর সময় বিক্ষুব্ধ জনতা দেখে ফেলে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতার একটি দল তাকে আটকাতে চেষ্টা করলে আহমেদ নেয়াজ পাবেলের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সে সরাসরি গুলো চালাতে থাকে। এসময় কয়েকজন আহতও হয়। ধারনা করা হচ্ছে সে ওই দিনই বিবির বাজার স্থল বন্দর হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে ওই দিন আহমেদ নেয়াজ পাবেলকে বাইক যোগে এগিয়ে দিয়ে এসেছে অজ্ঞাত এক ছেলে। সে সামনের সিটে বসে মোটরসাইকেল ড্রাইভিং করছিলেন আর আহমেদ নেয়াজ পাবেল পিছনের সিটে বসে ছিলেন। এবিষয়ে জানতে কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে এবিষয়ে জানতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইদুল ইসলাম কে ফোন দেওয়া হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। উল্লেখ যে, গত ৮ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মুঃ মুশফিকুর রহমান এর সভাপতিত্বে ও জেলা পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম এর উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সাংবাদিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সবার দাবি ছিলো সবার আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার পূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় আনার। যদিও কুমিল্লার অধিকাংশ থানা ও ফাঁড়িগুলোতে একটি চক্র ব্যাপক লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে পুলিশের আইনি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব না হওয়ায় এবং পুলিশ বাহিনীর একটি বড় অংশ কর্মবিরতির ডাক দিয়ে কর্মস্থলে যোগদান না করায় সেই দাবি বাস্তবায়নে কাজ করার সুযোগ হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে রবিবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সোমবার কুমিল্লা জেলার ১৮টি থানা ও তার আওতাধীন প্রায় ১৪টি পুলিশ ফাঁড়ি প্রায় সবগুলোতেই এবং জেলা ট্রাফিক বিভাগের পুলিশকেও কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট ও কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ৬টি হাইওয়ে থানাতেও পুরো দমে পুলিশি কার্যক্রম শুরু করতে দেখা গেছে। এমনকি কুমিল্লা হাইওয়ে রিজিয়নের অ্যাডিশনাল ডিআইজি খাইরুল আলম কে গত সোমবার বিকেলে ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানা পরিদর্শন করতেও দেখা গেছে।