দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লুটপাট, দখল বাণিজ্য এবং ‘জোর যার মুল্লুক তার’ অবস্থার আপাত:দৃষ্টিতে সমাধান হলেও আওয়ামী লীগের একটি অতি বেপরোয়া চক্রের কার্যক্রম থেমে নেই। দীর্ঘদিনের দখল বাণিজ্যের অভ্যাস তারা মুহূর্তেই পরিবর্তন করতে পারছে না বলেই মনে হচ্ছে। গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর কিছুদিন এই আওয়ামী দুষ্ট-চক্র গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও সম্প্রতি আবারো তারা তাদের পুরোনো পেশায় ফিরে দখল বাণিজ্যের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ঘটনাস্থল খোদ রাজধানীর প্রানকেন্দ্র মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা। মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনের নিকটস্থ একটি প্লট শেখ পরিবারের আত্মীয় পরিচয়ে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে মহিউদ্দিন শেখ গংরা। কখনো শেখ হেলালের আত্নীয় কখনো শেখ রেহানার আত্মীয় পরিচয় দেয়া হত্যা মামলার আসামী মহিউদ্দিন শেখ গত ৫ই আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের পর বেশ কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। সম্প্রতি আবারো পুলিশ প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার একটি প্লট দখলের জন্য মরিয়া হয়ে হামলা মামলা করেই ক্ষ্যান্ত হননি, মতিঝিল থানার একজন উপ-পরিদর্শককে সাথে নিয়ে উক্ত প্লটে অস্থায়ী ভিত্তিতে থাকা দোকানের ভাড়াটিয়াদের নিকট এখন থেকে ভাড়া তাঁর (মহিউদ্দিন) কাছে পরিশোধ করার জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। গত ১৬ নভেম্বর ২০২৪ মহিউদ্দিন শেখ ও তার দলের (অজ্ঞাতনামা) ৫০/৬০ জনের নামে রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ১২। মামলার ধারা ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮ ও ৫০৬।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকারবাসীর কাছ থেকে জানা যায় জমির প্রকৃত মালিক এনামুল হক, বদরউদ্দিন, সহ আরো অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। আবদুল মান্নান গং সিএস মালিকের ওয়ারিশ থেকে ক্রয় করে ভোগ দখল করে আসছেন। ঘটনা অনুসন্ধানে আরো জানা যায় সুরুজীত বসু (রাজু) মামলা নং ১৮৫ /২০১১ইং ৫ম যুগ্মজেলা জজ যাহা বর্তমানে ৬২৩/২০১৬ প্রথম অতিরিক্ত যুগ্ম জেলা জজ অদালতে চলমান আছে। সুরজীত বসু (রাজু) নিজেকে দেবত্তর দাবী করেন কিন্তু জেলা প্রশাসক ট্রেজারী শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় উক্ত নোটারী পাওয়ারের সাথে তাদের কাছে রক্ষিত তথ্যের সাথে কোন মিল খোজে পাওয়া যায় না। এতে প্রতিয়মান হয় সুরজীত বসু (রাজু) সিজনক্রত কাগজ তৈরি করে ভূমি দখলের কাজে লিপ্ত আছেন।
ইতিমধ্যে উক্ত জমির একাংশের উপর দিয়ে মেট্টো রেলের কার্যক্রম শুরু হলে সরকারী জমি অধিগ্রহণের মূল্যও সরকারী ভাবে জমির মালিক আক্তার হোসেন ও অন্যান্য মালিকপক্ষকেই পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারী ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য সরকারী নথিতে সিএস/আরএস-এ যথাযথ মালিক নিশ্চিত হয়েই মূল্য পরিশোধ করা হয়। এদিকে সুরজিত বসু (রাজু) নিজের মালিকানার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়ে শেখ মহিউদ্দিনকে ভাড়া করে। শেখ মহিউদ্দিন নিজেকে রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ের পাশাপাশি শেখ পরিবারের আত্মীয়, কখনো শেখ হেলালের নিকটাত্মীয়, কখনো শেখ রেহানার ঘনিষ্টজন পরিচয়ে স্থানীয় থানা প্রশাসনে গিয়ে নিজের কর্তৃত্ব দেখাতো। যদিও তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলা টংগীপাড়া। যার ফলশ্রুতিতে থানায় কর্মরত কর্মকর্তাগণ জমির প্রকৃত মালিকদের পক্ষ্য না নিয়ে শেখ মহিউদ্দিনের পক্ষাবলম্বন করতো। যদিও শেখ মহিউদ্দিন যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
একদিকে জমির প্রকৃত মালিকগন বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে সেখান থেকে কোনো লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। আর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
এখানে উল্লেখ্য, জুলাই-আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাধিক ছাত্র হত্যার অভিযোগে শেখ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী বেশ কিছুদিন শেখ মহিউদ্দিন গা-ঢাকা দিয়ে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি আবারো থানা প্রশাসনের ছত্র-ছায়ায় পূর্বের মূর্তিতে দখল বাণিজ্যে সরব হয়েছেন। ১৭ বছরের আওয়ামী দু:স্বাশনের দগদগে ঘা জনগন ভুলতে না ভুলতে আবারো এসব আওয়ামী হায়েনাদের রাক্ষুসে থাবা যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রতিহত না করেন, তবে জনগন আইন হাতে তুলে নিবে বৈকি! আর জনগন একবার ক্ষেপে গেলে কি ঘটতে পারে তাতো জুলাই-আগষ্টে সারা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কতিপয় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন যাবত এই জায়গা জবর দখলের পায়তারা করছে। আমরা এই জমির প্রকৃত মালিক মরহুম বদরুদ্দিন আহমেদ গংদের বলেই জানি। তাঁকে এবং তাঁর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণের নিকট অনেক বছর যাবত আমরা ভাড়া পরিশোধ করে আসছি। স্থানীয়রা আরো বলেন, কোটি কোটি টাকা মূল্যের এরকম একটি বাণিজ্যিক প্লট বছরের পর বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পরে থাকতে পারে না। বর্তমান বিপ্লবী সরকার তথা প্রশাসনের উচিত গুরুত্বপূর্ণ এই জমিটির ঝামেলা মিটমাট করে প্রকৃত মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া।